ইয়েমেনের মসজিদে ঘটে যাওয়া অবিশ্বাস্য ঘটনা—‘লাশ’ যখন জীবিত হয়ে মুসল্লিদের পেছনে দৌড়াল!

এক বৃদ্ধের দাফন আর রেখে যাওয়া খাটিয়া


ইসলামি বিশ্বে দিনশেষে মসজিদে নানা ঘটনা ঘটে—কখনো আধ্যাত্মিক, কখনো শিক্ষণীয়। কিন্তু ইয়েমেনের একটি মসজিদে যা ঘটেছিল, তা শুনলে হাসতেও মন চাইবে আবার ভয়ে বুকও ধকধক করবে! শায়খ আবু ইমাদ বর্ণনা করেছিলেন সেই ঘটনার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা—যা আজও মানুষ স্মরণ করে হাসতে হাসতে কুঁকড়ে যায়।

এক বৃদ্ধের দাফন আর রেখে যাওয়া খাটিয়া

শায়খের এক বন্ধু জানালেন—
গতকালই পাশের গলির এক বয়স্ক মানুষ, আবু নাসের, ইন্তেকাল করলেন। জানাজা আর দাফনের পর রাত গভীর হয়ে যায়। মসজিদ তখন বন্ধ, তাই মৃতদেহ বহনের খাটিয়াটি (খাট) রেখে দেওয়া হয় মসজিদের উঠোনেই। ঢেকে দেওয়া হয় মোটা কাপড় দিয়ে—সকাল হলে খাদেম এসে সরাবে—এই ছিল ভাবনা।

রাত সাড়ে তিনটার অতিথি

রাত তখন প্রায় সাড়ে তিনটা। প্রচণ্ড শীত আর নিস্তব্ধ রাত।
এক লোক মসজিদে এসে দেখে দরজা তালাবদ্ধ। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শীত তাকে কাঁপিয়ে দিচ্ছে। আশপাশে কেউ নেই।

হঠাৎ তার নজর পড়ে সেই খাটিয়ার দিকে।
ঢেকে রাখা চাদরের নিচে নরম বিছানা। আরামদায়ক মনে হয়।

কথায় আছে, ঠান্ডা মানুষকে যুক্তির চেয়ে সাহসী করে দেয়!
তিনি খাটিয়ার ঢাকনা সরিয়ে ভেতরে গা এলিয়ে দিলেন—আর দু’মিনিটের মধ্যেই গা-ঢাকা মুচমুচে ঘুম!

সকাল—যেন ঝড়ের আগের নিস্তব্ধতা

ফজরের সময় খাদেম এলেন মসজিদ খুলতে। তিনি ধারণা করলেন—ভোরে জানাজা আছে, এই বুঝি লাশসহ খাটিয়া রেখে গেছে কেউ। তাই সতর্কতার সঙ্গে খাটিয়াটি মেহরাবের পাশে এনে রাখলেন ইমাম সাহেবের ঠিক পিছনে।

মসজিদ ভরে গেল, প্রায় পঞ্চাশ জন মুসল্লি।
রাকাত শুরু হলো, সবাই শান্ত—নিঃশব্দ।

হঠাৎ… খাটিয়া নড়তে শুরু করল!

দ্বিতীয় রাকাত।
হঠাৎ প্রথম সারির মুসল্লিরা বুঝতে পারলেন—খাটিয়াটা… নড়ছে!
প্রথমে মনে হলো চোখের ভুল।
পরে আবার নড়ল—এবার আর সন্দেহ নেই।

ভয়ে কারও গলা শুকিয়ে গেল, কারও পা কাঁপা শুরু। পুরো কাতারে যেন হিমশীতল আতঙ্ক।

ঠিক তখনই—
খাটিয়ার ভেতর থেকে ঢাকনাটা আস্তে আস্তে উঠল…

‘ভাই, নামাজ পড়ে ফেলেছেন?’

ঘুম ভাঙা মুখে লোকটা মাথা বের করল আর বলল—

“ভাই, আপনারা কি নামাজ পড়ে ফেলেছেন?”

এই এক বাক্যেই মসজিদের ভেতর শুরু হলো যেন কেয়ামতের দৃশ্য!
শায়খ বলেন—
“আল্লাহর কসম, সেই দৃশ্য চোখে দেখলে বিশ্বাস করা যেত না। আমি জুতার ফিতা বাঁধার কথাই ভুলে খালি পায়ে দৌড় দিয়েছিলাম! ইমাম সাহেব ভয়ে মেঝেতে ঢলে পড়লেন। কেউ কেউ দেয়ালে গিয়ে মাথা ঠুকলেন। কেউ অজুখানার পানির হাউজে পড়ে গেল!”

কিছু সেকেন্ডের মধ্যে পুরো মসজিদ ফাঁকা।

‘লাশ’ও দৌড়াতে শুরু করল!

মজার বিষয় হলো—খাটিয়া থেকে ওঠা সেই লোকটিও—কারও কিছু বুঝে উঠার আগেই—সবাইকে অনুসরণ করে দৌড়াতে শুরু করল!

সে দৌড়াচ্ছে আর চিৎকার করছে—

“ও ভাই, কি হয়েছে? কেয়ামত নেমে গেল নাকি? আপনারা দৌড়াচ্ছেন কেন?”

আর মুসল্লিরা পিছন ফিরে দেখে ‘লাশ’ তাদের পেছনে দৌড়াচ্ছে—
এই দৃশ্য দেখে তাদের গতি আরও বেড়ে গেল!

লোকটা তখনও দিশেহারা—

“আমাকে ফজরের জন্য ডাক দিলেন না কেন? আল্লাহ আপনাদের বিচার করবেন!”

কিন্তু সে জানতই না—এই তোলপাড়ের নায়ক আসলে সে নিজেই!

ঘটনার শিক্ষা—হাসির মধ্যেও রয়েছে স্মরণীয় বার্তা

ঘটনাটি হাস্যকর হলেও এর মাঝে কিছু শিক্ষা লুকিয়ে আছে:

  • অন্ধ বিশ্বাস থেকে মানুষ কখনো কখনো ভয়কে বড় করে দেখে।
  • যে জিনিসকে আমরা সত্য মনে করি, বাস্তবতা হয়তো সম্পূর্ণ ভিন্ন।
  • আর… রাতের শীতে খাটিয়ায় শোয়া মোটেও ভালো ধারণা নয়!

এই গল্পটি ইয়েমেনের ধর্মপ্রাণ মানুষের মাঝে আজও হাস্যরসের সঙ্গে বলা হয়। মনে করিয়ে দেয়—জীবন কখনো কখনো ধর্মীয় পরিবেশেও চমক আর হাসির রঙে রঙিন হয়ে ওঠে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন