কলেরা রোগ, কুসংস্কার ও বিজ্ঞান: এক চোখ কানা বুড়ির গল্প থেকে বাস্তব শিক্ষা
বাংলার ইতিহাসে বহুদিন ধরেই এক ভয়ংকর মহামারীর নাম ছিল কলেরা। গ্রামে-গঞ্জে, শহরে কিংবা জনপদে এই রোগ ছড়িয়ে পড়লে মুহূর্তেই মানুষ মারা যেত। চিকিৎসা ব্যবস্থা ছিল না, বিজ্ঞানের জ্ঞান সীমিত ছিল। ফলে মানুষ নানা রকম কুসংস্কারে বিশ্বাস করত। এর মধ্যে সবচেয়ে প্রচলিত একটি গল্প হলো — এক চোখ কানা বুড়ির গল্প।
মানুষ বিশ্বাস করত, কলেরা আসলে কোনো প্রাকৃতিক রোগ নয় বরং এক রহস্যময় বুড়ির অভিশাপ। সেই বুড়ি এক চোখ কানা হওয়ায় সে নাকি শুধু একপাশে তাকাতে পারত, আর যেখানে তাকাত সেখানেই কলেরা ছড়িয়ে যেত। আশ্চর্যের বিষয় হলো, এই গল্পে আংশিক সত্য লুকিয়ে ছিল। তবে এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা জানলে আপনি অবাক হবেন।
কলেরা কী এবং কিভাবে ছড়ায়?
কলেরা একটি পানিবাহিত সংক্রামক রোগ যা মূলত ভিব্রিও কলেরি (Vibrio cholerae) নামক জীবাণুর কারণে হয়। যখন এই জীবাণু মিশ্রিত পানি বা খাবার শরীরে প্রবেশ করে তখন মানুষ কলেরায় আক্রান্ত হয়।
- এটি মূলত দূষিত পানির মাধ্যমে দ্রুত ছড়ায়।
- একবার কোনো এলাকায় প্রবেশ করলে আশেপাশের মানুষও আক্রান্ত হয়।
- বমি ও ডায়রিয়ার কারণে রোগী দ্রুত পানিশূন্যতায় মারা যেতে পারে।
আজকের দিনে এ রোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসা সম্ভব হলেও প্রাচীনকালে মানুষ কিছুই জানত না। তখন তারা অসহায় হয়ে নানা কুসংস্কারের আশ্রয় নিত।
কুসংস্কারের জন্ম: এক চোখ কানা বুড়ি
আগে দেখা যেত, যদি কোনো একটি বাড়িতে কলেরা শুরু হয়, তা প্রায়শই পাশের বাড়িগুলোতে ছড়িয়ে পড়ত। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে অন্য পাশের বাড়িগুলোতে হয়তো ছড়াত না।
মানুষ তখন এর বৈজ্ঞানিক কারণ না জেনে ধরে নিত, “এটা সেই এক চোখ কানা বুড়ির কাজ।”
- বুড়ি নাকি কেবল একপাশে তাকায়।
- তাই কলেরা শুধু এক পাশের বাড়িতে ছড়ায়।
- তারা বিশ্বাস করত, যদি বুড়ির চোখ কানা করে দেওয়া যায়, তবে রোগ আর ছড়াবে না।
এই কুসংস্কার এতটাই জনপ্রিয় ছিল যে গ্রামীণ সমাজে একসময় সত্যিই নানা রকম রীতিনীতি চালু হয়েছিল।
রহস্যময় রীতি: উত্তপ্ত লোহা ডুবিয়ে রাখা
মানুষ বিশ্বাস করত বুড়ির চোখ কানা করার জন্য লোহার রড বা লাঠি আগুনে গরম করে পানির কলসের মধ্যে ডুবিয়ে রাখতে হবে।
এরপর দেখা যেত, আশ্চর্যজনকভাবে কলেরা আর তেমনভাবে ছড়াচ্ছে না। তখনকার মানুষদের কাছে এটি ছিল প্রমাণ যে তাদের কুসংস্কারই সত্যি।
কিন্তু আসল রহস্য লুকিয়ে আছে বিজ্ঞানের ব্যাখ্যায়।
বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা: আসলে কী ঘটত?
আমরা এখন জানি, কলেরা হলো জীবাণুবাহিত রোগ। আর জীবাণু উচ্চ তাপমাত্রায় টিকে থাকতে পারে না।
যখন লোকেরা গরম লোহা পানির মধ্যে ডুবিয়ে রাখত, তখন—
- পানির ভেতরের তাপমাত্রা বেড়ে যেত।
- এতে ভিব্রিও কলেরি জীবাণু ধ্বংস হয়ে যেত।
- ফলে পানি তুলনামূলকভাবে নিরাপদ হয়ে যেত।
- সেই পানি খেয়ে আর নতুন করে কেউ অসুস্থ হতো না।
অতএব, তারা যে “বুড়ির চোখ কানা করেছে” ভাবত, সেটা আসলে বিজ্ঞানের অজান্তে পানি জীবাণুমুক্ত করার প্রক্রিয়া ছিল।
কুসংস্কার থেকে শিক্ষা
এই গল্প আমাদের বড় একটি শিক্ষা দেয়:
- অজ্ঞানতার কারণে মানুষ প্রায়ই অযৌক্তিক কুসংস্কারে বিশ্বাস করে।
- তবে সেই কুসংস্কারের মধ্যেও কখনো কখনো বৈজ্ঞানিক সত্য লুকিয়ে থাকতে পারে।
- বিজ্ঞান না জানলেও মানুষ অভিজ্ঞতা থেকে কিছু কার্যকর উপায় খুঁজে নিত।
আধুনিক চিকিৎসা ও প্রতিরোধ
আজকের দিনে আমরা জানি, কলেরা প্রতিরোধের সবচেয়ে বড় উপায় হলো পরিষ্কার পানি পান করা।
✅ কী করলে কলেরা প্রতিরোধ করা যায়:
- সবসময় পানি ফুটিয়ে বা বিশুদ্ধ করে পান করতে হবে।
- খাবারের আগে ও পরে সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুতে হবে।
- খাবার সবসময় ঢেকে রাখতে হবে।
- নোংরা ড্রেন ও আবর্জনা জমে থাকা পানি এড়িয়ে চলতে হবে।
- কলেরা টিকা গ্রহণ করা উচিত।
✅ আক্রান্ত হলে কী করতে হবে:
- প্রচুর পরিমাণে ওরস্যালাইন (ORS) খেতে হবে।
- গুরুতর হলে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে।
- স্যালাইন ও অ্যান্টিবায়োটিক চিকিৎসা নিলে রোগ সারানো যায়।
কেন পানি ফুটিয়ে খাওয়া জরুরি?
প্রাচীন কালের মানুষ না জানলেও তাদের কাজ প্রমাণ করে—পানি জীবাণুমুক্ত করলে রোগ কমে। আজ বিজ্ঞানীরা একে আরও নিশ্চিত করেছেন।
- পানিকে অন্তত ১০ মিনিট ফুটালে কলেরাসহ সব ক্ষতিকারক জীবাণু ধ্বংস হয়।
- এতে শুধু কলেরা নয়, টাইফয়েড, আমাশয়সহ অনেক পানিবাহিত রোগ প্রতিরোধ হয়।
কলেরার ইতিহাস
কলেরার ইতিহাস বহু পুরনো। গবেষকরা মনে করেন, দক্ষিণ এশিয়াই ছিল কলেরার জন্মভূমি। বিশেষ করে বাংলার গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র অববাহিকা অঞ্চল এই রোগ ছড়ানোর জন্য সবচেয়ে বেশি পরিচিত ছিল।
- ১৮১৭ সালে প্রথমবারের মতো কলকাতা থেকে শুরু হয়ে পুরো ভারতবর্ষে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ে।
- ১৯ শতকে কলেরার ঢেউ ইউরোপ, আফ্রিকা এবং আমেরিকা পর্যন্ত পৌঁছে যায়।
- সেই সময়কার মানুষ কলেরাকে "Asiatic Cholera" বলত।
বাংলা ছিল কলেরার প্রধান কেন্দ্র। এখান থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই রোগ ছড়িয়েছিল।
বাংলায় কলেরার ভয়াবহতা
প্রাচীনকালে বর্ষা মৌসুম এলেই কলেরা ছড়ানোর আশঙ্কা থাকত। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে যেখানে—
- পানির উৎস ছিল পুকুর,
- স্যানিটেশন ছিল না,
- মানুষ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস করত,
সেখানে কলেরা ছিল এক অভিশাপ।
অনেক গ্রাম প্রায় জনশূন্য হয়ে যেত। পরিবার থেকে কয়েক দিনের মধ্যে তিন-চারজন মারা যাওয়া ছিল স্বাভাবিক ঘটনা।
কলেরা নিয়ে কুসংস্কার
অজ্ঞতার কারণে মানুষ কলেরাকে কখনো "ঈশ্বরের অভিশাপ", কখনো "ডাইনির কাজ", আবার কখনো "এক চোখ কানা বুড়ির অভিশাপ" বলে মানত।
🔸 এক চোখ কানা বুড়ির গল্প ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের বিশ্বাস প্রচলিত ছিল:
- কারো ধারণা ছিল, কলেরা এলে মাটির নিচ থেকে অশুভ আত্মা বের হয়।
- অনেক জায়গায় কলেরা ঠেকাতে তাবিজ-কবজ ব্যবহার করা হতো।
- কোথাও আবার কলেরাকে তাড়াতে ঢাক বাজিয়ে মিছিল বের করা হতো।
আসলে এসব ছিল মানুষের অজ্ঞানতার ফল।
বিজ্ঞান বনাম কুসংস্কার
যখন মানুষ গরম লোহা পানিতে ডুবাত, তখন তারা ভেবেছিল বুড়ির চোখ কানা হয়ে গেছে, তাই আর কলেরা ছড়াচ্ছে না।
কিন্তু বাস্তবে, পানির জীবাণু তাপে ধ্বংস হয়ে যেত, আর মানুষ অসুস্থ হতো না।
এই ঘটনা প্রমাণ করে, মানুষ বিজ্ঞানের ভাষা না জানলেও অভিজ্ঞতার মাধ্যমে অনেক সময় কার্যকর উপায় বের করতে পারে।
কলেরা নিয়ে আজব ও রহস্যময় কিছু ঘটনা
১. ঢাক বাজিয়ে কলেরা তাড়ানো
বাংলার গ্রামে-গঞ্জে কলেরা ছড়িয়ে পড়লে মানুষ মনে করত, এটি কোনো অশুভ আত্মার আগমন।
- রাতের বেলা গ্রামবাসী একসঙ্গে জড়ো হতো।
- ঢাক-ঢোল বাজিয়ে, বাঁশি ফুঁ দিয়ে, উলুধ্বনি তুলে তারা মিছিল বের করত।
- বিশ্বাস ছিল, শব্দে ভয়ে ভূত-প্রেত পালিয়ে যাবে আর কলেরা থেমে যাবে।
আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, অনেক সময় কলেরা সত্যিই থেমে যেত—কারণ মানুষ পানি খাওয়ার আগে শুদ্ধ করতে শুরু করত, তবে তারা ভেবেছে এটা শব্দের জাদুতে হয়েছে!
২. কলেরার দেবী পূজা
ভারতবর্ষের অনেক জায়গায় একসময় বিশ্বাস করা হতো, কলেরা হলো “ওলা দেবীর অভিশাপ”।
- ওলা দেবীকে খুশি করতে বিশেষ পূজা দেওয়া হতো।
- গরুর দুধ, চাল, ফুল, প্রদীপ দিয়ে মানুষ প্রার্থনা করত যাতে পরিবার রক্ষা পায়।
- অনেক স্থানে আবার আলাদা “ওলা দেবীর মন্দির”ও গড়ে ওঠে।
অদ্ভুত ব্যাপার হলো, এসব মন্দির এখনো কোথাও কোথাও দেখা যায়।
৩. লাশ ভাসিয়ে দেওয়া
কিছু এলাকায় কলেরায় মৃতদের দ্রুত নদীতে ভাসিয়ে দেওয়ার রেওয়াজ ছিল।
- তাদের বিশ্বাস, যদি লাশ দ্রুত দূরে পাঠানো যায়, তবে কলেরা গ্রামে থাকবে না।
- কিন্তু বাস্তবে, মৃতদেহ পানিকে আরও দূষিত করত এবং রোগ আরও ছড়িয়ে পড়ত।
- তখনকার মানুষ না বুঝলেও আজ আমরা জানি, এটা ছিল ভয়ংকর ভুল।
৪. এক চোখ কানা বুড়ির আতঙ্ক
সবচেয়ে রোমাঞ্চকর গল্প হলো এক চোখ কানা বুড়ি।
- লোকেরা বিশ্বাস করত, কলেরা ছড়ানোর নেপথ্যে রয়েছে সেই রহস্যময় বুড়ি।
- সে নাকি কেবল এক দিকে তাকায়, আর যেদিকে তাকায় সেদিকের মানুষ কলেরায় আক্রান্ত হয়।
- তাই মানুষ লোহার রড গরম করে পানিতে ডুবিয়ে রাখত।
- তাদের ধারণা ছিল—এভাবে বুড়ির চোখ পুড়ে গেছে, আর সে আর তাকাতে পারবে না।
আশ্চর্যের বিষয় হলো, বুড়ির এই মিথই মানুষকে অজান্তেই পানি জীবাণুমুক্ত করার প্রক্রিয়া শিখিয়ে দিয়েছিল।
৫. ভুতুড়ে কাহিনি
গ্রামের বয়স্করা অনেক সময় বলতেন—রাতের বেলা কলেরায় আক্রান্ত বাড়ির আশপাশে নাকি তারা অদ্ভুত ছায়া দেখেছেন।
- কারো মতে সেটা ছিল বুড়ি,
- কারো মতে অশরীরী আত্মা,
- আবার কেউ বলত কুকুর হঠাৎ চিৎকার করলেই বোঝা যেত বুড়ি পাশ দিয়ে গেছে!
বাস্তবে এগুলো ছিল মানুষের ভীতি আর কুসংস্কারের কল্পনা, কিন্তু তখনকার মানুষ এগুলোকে ভয়ংকর বাস্তব বলে মানত।
এসব আজব ঘটনা প্রমাণ করে, মানুষ ভয় আর অজ্ঞানতার কারণে অনেক রোমাঞ্চকর কুসংস্কার তৈরি করেছিল। আর সেখান থেকেই জন্ম নিয়েছে নানা রহস্যময় লোককাহিনি, যা আজও শোনা যায়।
আরও কিছু রোমাঞ্চকর, আজব ও কুসংস্কারময় ঘটনা লিখে দিচ্ছি, যা কলেরাকে ঘিরে গ্রামবাংলা ও ভারতীয় উপমহাদেশে প্রচলিত ছিল। এগুলোকে একটু স্টোরিটেলিং ধাঁচে সাজাচ্ছি যেন পাঠকরা পড়লে ভৌতিক–রহস্যময় অনুভূতি পান।
কলেরা ঘিরে আরও আজব ও রহস্যময় ঘটনা
৬. কলেরা তাড়াতে লাল কাপড় ঝোলানো
গ্রামের অনেক মানুষ বিশ্বাস করত, লাল রঙ নাকি অশুভ শক্তিকে ভয় দেখায়।
- কলেরা শুরু হলে বাড়ির দরজায় বা উঠোনে লাল কাপড় ঝুলিয়ে রাখা হতো।
- ধারণা ছিল, লাল কাপড় দেখেই এক চোখ কানা বুড়ি ভয় পেয়ে পালাবে।
- আসল সত্য হলো, লাল কাপড় ঝুলানো মানেই লোকজন বুঝত, ওই বাড়িতে রোগ আছে—তারা কাছে যেত না। ফলে সংক্রমণ কমত।
৭. গাছের গোড়ায় কলস ভরে রাখা
কোথাও কোথাও দেখা যেত, কলেরা প্রতিরোধের জন্য গ্রামের মানুষ গাছের গোড়ায় কলস ভরে রাখত।
- তারা সেই কলসে পানি, চাল, ফুল আর প্রদীপ রাখত।
- বিশ্বাস করত, এতে করে "পৃথিবীর আত্মা" শান্ত হবে, আর কলেরা গ্রাম ছেড়ে চলে যাবে।
- অনেক সময় মন্ত্র পড়া পানিও সেই কলসে রাখা হতো।
৮. রাতের বেলা গ্রাম ছাড়তে না দেওয়া
কিছু এলাকায় নিয়ম ছিল, কলেরার সময় রাতের বেলা কেউ গ্রাম ছাড়তে পারবে না।
- কারণ বিশ্বাস করা হতো, যদি অসুস্থ মানুষ বা তার আত্মীয় রাতের অন্ধকারে গ্রাম ছাড়ে, তাহলে কলেরার ভূতও তাদের সঙ্গে যাবে এবং নতুন গ্রামে ছড়িয়ে পড়বে।
- তাই গ্রামবাসী মিলে পাহারা দিত।
৯. কলেরা তাড়াতে আগুনের মিছিল
আরেকটি অদ্ভুত রীতি ছিল আগুন নিয়ে মিছিল করা।
- মানুষ বাঁশে শুকনো খড় বেঁধে আগুন জ্বালিয়ে রাস্তায় ঘুরত।
- তারা চিৎকার করে বলত—“ওলা মা দূর হ, ওলা মা দূর হ।”
- ধারণা ছিল, আগুনের আলো-তাপে ভূতুড়ে বুড়ি ভয় পেয়ে পালিয়ে যাবে।
১০. কলেরার জন্য আলাদা গান ও মন্ত্র
বাংলার লোকসংস্কৃতিতে এমন কিছু বিশেষ গান ও মন্ত্র পাওয়া যায়, যা কলেরার সময় গাওয়া হতো।
- মহিলারা দল বেঁধে উঠোনে বসে গান গাইত।
- অনেক সময় ঢোল বাজিয়ে তারা ওলা মা’র কীর্তন করত।
- বিশ্বাস ছিল, দেবী খুশি হলেই রোগ থেমে যাবে।
১১. রহস্যময় ‘কলেরার ছায়া’
গ্রামের বয়স্করা বলতেন, রাতে কলেরার বাড়ির পাশে হাঁটলে নাকি মাথার ওপর দিয়ে ঠাণ্ডা হাওয়া চলে যেত।
- তারা এটাকে বলত কলেরার ছায়া।
- অনেকে দাবি করত, হঠাৎ কুকুর হাউল করলে বুঝতে হবে বুড়ি পাশ দিয়ে হেঁটে গেছে।
- আসলে এসব ছিল রোগ আর মৃত্যুভীতির কারণে মানুষের মানসিক বিভ্রম।
১২. মৃতদেহের ওপর লেবু কেটে রাখা
কিছু এলাকায় কলেরায় মারা যাওয়া মানুষের লাশের ওপর লেবু কেটে রাখা হতো।
- বিশ্বাস ছিল, লেবুর টক গন্ধে অশুভ আত্মা কাছে আসতে পারবে না।
- আসলে লেবুর অল্প অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণ থাকায় কিছুটা দুর্গন্ধ কমত, তবে কলেরা আটকানো যেত না।
১৩. রহস্যময় শোভাযাত্রা
কিছু গ্রামে কলেরা শুরু হলে মহিলারা রাস্তায় শোভাযাত্রা বের করত।
- হাতে থাকত মাটির কলস, ভেতরে প্রদীপ জ্বলছে।
- তারা গাইত—“ওলা মা যাও, ওলা মা যাও।”
- সেই মিছিল শেষে কলস ফেলে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হতো।
শেষ কথা
এসব ঘটনাই প্রমাণ করে, মানুষ ভয়, অনিশ্চয়তা আর অজ্ঞতার কারণে অদ্ভুত রীতি-কুসংস্কার তৈরি করেছিল। একদিকে সেগুলো রহস্যময় ও রোমাঞ্চকর শোনালেও অন্যদিকে এর ভেতর কিছু কার্যকর শিক্ষা লুকানো ছিল।
যেমন—লাল কাপড় ঝোলানোয় লোকজন দূরে থাকত, গরম লোহা ডোবানোয় পানি জীবাণুমুক্ত হতো, আগুন জ্বালানোয় পরিবেশ পরিষ্কার থাকত।
অর্থাৎ, কুসংস্কারের আড়ালেও বিজ্ঞান কাজ করছিল—শুধু মানুষ বুঝতে পারছিল না।
আমার ব্লগে স্বাগতম
এখানে আমার বিভিন্ন পোস্ট দেখুন:
