কলেজ জীবনের শেষ দিনে সবাই কেন কালো পোশাক পরে?


গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট করার পর কেন পরা হয় কালো পোশাক ও খালো টুপি?
কলেজ জীবনের শেষ দিনে সবাই কেন কালো পোশাক পরে?

শিক্ষা জীবন হলো প্রতিটি মানুষের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ছোট বেলা থেকে শুরু করে প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক—সব পর্যায়ের শিক্ষাই আমাদের মননের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে শিক্ষা জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় অধ্যায়গুলোর মধ্যে একটি হলো বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজ জীবন। এই সময় শিক্ষার্থীরা শুধু পাঠ্যক্রম শেষ করে না, বরং সামাজিক দক্ষতা, নেতৃত্বের ক্ষমতা এবং ব্যক্তিত্বের বিকাশেও অংশ নেয়। আর সেই জীবনের একটি বিশেষ মাইলফলক হলো গ্র্যাজুয়েশন বা স্নাতকোত্তর সমাপনী অনুষ্ঠান

প্রায় সবাই দেখেছে যে, এই অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা বিশেষ পোশাক পরিধান করে—সাধারণত কালো গাউন বা টগ, সঙ্গে খালো টুপি বা ক্যাপ। অনেকের প্রশ্ন হতে পারে, “এটি কেবল আড্ডা বা ফ্যাশন হিসেবে কি করা হয়?” না, এর মধ্যে রয়েছে অনেক ঐতিহ্য, অর্থ এবং প্রতীকী মূল্য

ইতিহাসের দিক থেকে গ্র্যাজুয়েশন পোশাক

গ্র্যাজুয়েশন পোশাকের ইতিহাস মূলত মধ্যযুগের ইউরোপ থেকে এসেছে। তখনকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো, যেমন অক্সফোর্ড এবং কেমব্রিজ, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিল। শিক্ষার্থীরা মূলত মঠ বা চ্যাপেলের শিক্ষার্থী হিসেবে পড়ত। সেই সময়ের শিক্ষার্থীরা দৈনন্দিন জীবনে যে পোশাক পরত, তা মূলত দীর্ঘ এবং ঢাকনা সহ ছিল—যা তখনকার ধর্মীয় পোশাকের সঙ্গে মিলে যায়। গুরুত্বপূর্ণ ব্লগ পোস্ট

📌 পাঁচ তারকা হোটেলের বাথরুমে টেলিফোন থাকে কেন

  • কালো রঙের পোশাকের কারণ:
    মধ্যযুগে কালো রঙকে জ্ঞান, শৃঙ্খলা এবং স্থায়িত্বের প্রতীক হিসেবে দেখা হতো। এটি শিক্ষার্থীর গুরুত্বপূর্ণ এবং গম্ভীর অধ্যয়নের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি দেখানোর জন্যও ব্যবহার করা হতো। কালো রঙ ধূসর বা ফিকে হয়ে যাওয়া সহজ, তাই এটি দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহারের জন্যও উপযুক্ত ছিল।

  • খালো টুপি বা ক্যাপের উদ্ভব:
    খালো টুপি বা মোর্টারবোর্ড ক্যাপ মূলত শিক্ষার্থীদের মাথা ঢাকার প্রয়োজনীয়তার কারণে তৈরি হয়েছিল। ধনীদের ও সাধুদের মাথা ঢাকার প্রথার সঙ্গে মিলিয়ে এটি শিক্ষার প্রসঙ্গে একটি প্রতীকী রূপে এসেছে। বিশেষ করে মধ্যযুগে শিক্ষার্থীরা যেহেতু দীর্ঘ সময় ধরে চ্যাপেল বা লাইব্রেরিতে বসে পড়াশোনা করত, তাই মাথা ঢাকার জন্য খালো বা ক্যাপ ব্যবহার করাই একধরনের প্রথা হয়ে ওঠে।

প্রতীকী অর্থ

কালো গাউন এবং খালো টুপি শুধুই ঐতিহ্য নয়, এগুলো গভীর প্রতীকী অর্থ বহন করে

  1. জ্ঞান এবং প্রজ্ঞার প্রতীক:
    কালো গাউন পরিধান করা শিক্ষার্থীর অর্জিত জ্ঞান ও প্রজ্ঞাকে প্রতীকীভাবে উপস্থাপন করে। এটি দেখায় যে, ব্যক্তি কেবল সাধারণ জ্ঞান অর্জন করেনি, বরং গভীর চিন্তা ও অধ্যয়নের মধ্য দিয়ে নিজের মননকে সমৃদ্ধ করেছে।

  2. শৃঙ্খলা ও কর্তব্যবোধ:
    গাউন পরিধান শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক ধরনের শৃঙ্খলা এবং প্রফেশনাল আচরণ গড়ে তোলে। এটি দেখায় যে, গ্র্যাজুয়েটরা এখন একটি দায়িত্বশীল এবং প্রাপ্তবয়স্ক জীবনে প্রবেশ করছে, যেখানে তাদের সমাজের প্রতি কর্তব্য পালনের গুরুত্ব রয়েছে।

  3. সমতা ও একীকরণ:
    গ্র্যাজুয়েশন পোশাক সকল শিক্ষার্থীকে একরূপ দেখায়। সমাজে যেখানেই তাদের পেছনের পটভূমি, অর্থনৈতিক অবস্থা বা ধর্মভিত্তিক পার্থক্য থাক, এই পোশাক সব শিক্ষার্থীকে একই দিক থেকে সমান করে তুলে

আধুনিক সংস্কৃতিতে প্রভাব

আজকের দিনে, অনেক দেশেই গ্র্যাজুয়েশন গাউন ও খালো টুপি একটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃত প্রতীক হিসেবে ব্যবহার হয়। এটি শুধুমাত্র ইউরোপ নয়, এশিয়া, আফ্রিকা ও আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও এখন প্রচলিত।

  • শিক্ষার্থীরা একসাথে গাউন পরে বসে থাকলে, তা একটি সম্মান ও ঐক্যের অনুভূতি তৈরি করে।
  • ফটোগ্রাফি ও স্মৃতি হিসেবে এটি একটি চিরন্তন প্রতীক হয়ে ওঠে, যা ব্যক্তির জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়কে চিহ্নিত করে।

শিক্ষার মর্যাদা এবং সামাজিক প্রভাব

কালো গাউন ও খালো টুপি শিক্ষার্থীর অর্জনকে শুধুই ব্যক্তিগত সাফল্য হিসেবে নয়, সামাজিক মর্যাদা ও সম্মান হিসেবে তুলে ধরে। গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠানটি কেবল সেলিব্রেশন নয়, বরং সমাজে শিক্ষিত এবং জ্ঞানী নাগরিক হিসেবে আত্মপ্রকাশের মাধ্যম

এছাড়াও, কিছু দেশে এই পোশাকের রঙ বা ডিজাইন বিভিন্ন ডিগ্রি অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়। যেমন:

  • স্নাতক স্তরের জন্য সাধারণত কালো।
  • স্নাতকোত্তর বা মাস্টার্স ডিগ্রির জন্য কিছু ক্ষেত্রে রঙিন ট্রিম বা হুড যোগ করা হয়।
  • ডাক্তার বা আইন বিষয়ের জন্য বিশেষ গাউন ও হুড ব্যবহার করা হয়, যা তাদের বিশেষ ক্ষেত্রকে চিহ্নিত করে।

গ্র্যাজুয়েশন পোশাক: বিশ্বব্যাপী ঐতিহ্য ও বৈচিত্র্য

যদিও গ্র্যাজুয়েশন গাউন ও খালো টুপি মূলত ইউরোপীয় মধ্যযুগ থেকে এসেছে, এটি আজ বিশ্বের প্রায় প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একটি আন্তর্জাতিক প্রথা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তবে প্রতিটি দেশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব সংস্কৃতি অনুযায়ী এর রূপ, রঙ এবং অর্থে কিছুটা পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়।

১. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গ্র্যাজুয়েশন প্রথা

মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গ্র্যাজুয়েশন পোশাক মূলত কালো গাউন ও খালো টুপি। তবে কিছু ক্ষেত্রে:

  • ডিগ্রি অনুযায়ী হুড বা ট্রিমের রঙ পরিবর্তিত হয়।
  • স্নাতক শিক্ষার্থীরা সাধারণ গাউন পরে, কিন্তু মাস্টার্স ও পিএইচডি শিক্ষার্থীদের জন্য বেশি বিশেষায়িত হুড থাকে।
  • খালো টুপি বা Mortarboard-এর উপরে শিক্ষার্থীরা প্রায়শই সৃজনশীল ও মজাদার ডিজাইন করে, যা শিক্ষাজীবনের আনন্দের প্রকাশ।

এছাড়া মার্কিন গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা ক্লাসমেট এবং পরিবার নিয়ে আনন্দ উদযাপন করে।

২. ইউরোপীয় দেশগুলোর প্রথা

ইউরোপে, বিশেষ করে ব্রিটেন ও ফ্রান্সের কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে, গাউন ও খালো টুপি আরও ঐতিহ্যবাহী ও আনুষ্ঠানিক রূপে ব্যবহার হয়।

  • অক্সফোর্ড ও কেমব্রিজের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে গাউনগুলো বিভিন্ন রঙ এবং স্টাইলের হয়, যা শিক্ষার্থীর ডিগ্রি এবং কলেজের শ্রেণি নির্দেশ করে।
  • ইউরোপীয় অনেক দেশে শিক্ষার্থীরা অনুষ্ঠান চলাকালীন পুরনো ঐতিহ্য অনুযায়ী নিজস্ব নৈতিকতা ও আচরণ বজায় রাখে, যা গুণমান এবং শিক্ষার মর্যাদা দেখায়।

৩. এশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়

এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে গাউন এবং খালো টুপি ব্যবহার দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। যদিও প্রথার শুরু ইউরোপ থেকে, এখানে:

  • শিক্ষার্থীরা প্রায়শই কালো গাউন ও খালো টুপি পরে।
  • কিছু দেশে স্থানীয় রঙ এবং প্রতীক যুক্ত করা হয়, যা দেশীয় সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যকে তুলে ধরে।
  • উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠানে গাউন এবং খালো টুপি ব্যবহার ছাত্রদের অর্জিত শিক্ষার মর্যাদা এবং সামাজিক সম্মান প্রদর্শনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৪. গাউন ও খালো টুপি: আধুনিক প্রভাব

আজকের দিনে, গ্র্যাজুয়েশন পোশাক কেবল ঐতিহ্যিক নয়, একটি স্মৃতি ও ফটোগ্রাফির প্রতীক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ।

  • শিক্ষার্থীরা গাউন পরে ফটোগ্রাফিতে মহান অর্জন এবং প্রফেশনাল ইমেজ তুলে ধরে।
  • খালো টুপি শিক্ষার্থীর সৃজনশীলতা প্রকাশের একটি মাধ্যমও হতে পারে।
  • বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই মুহূর্তগুলো শেয়ার করার জন্য উৎসাহ দেয়, যা শিক্ষার্থীর নিজস্ব এবং পেশাদার পরিচয়কে আরও দৃঢ় করে।

৫. কালো রঙের প্রভাব

কালো গাউন শুধু ঐতিহ্যগত নয়, এটি একটি মানসিক প্রভাবও সৃষ্টি করে

  • কালো রঙ গুরুত্ব, গম্ভীরতা এবং প্রজ্ঞার প্রতীক
  • এটি শিক্ষার্থীদের মনে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক অর্জনের অনুভূতি জাগিয়ে তোলে।
  • একরূপ পোশাক শিক্ষার্থীদের মধ্যে সমতা ও দলগত ভাব তৈরি করে, যা সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকেও গুরুত্বপূর্ণ।

৬. খালো টুপি বা Mortarboard: প্রতীকী মানে

খালো টুপি বা ক্যাপের উপরে থাকা ট্যাসেল বা ফিতা শুধু সজ্জা নয়, এটি ডিগ্রি অর্জনের নির্দেশক

  • উদাহরণস্বরূপ, মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথা অনুযায়ী, শিক্ষার্থীরা ডিগ্রি নেওয়ার সময় ট্যাসেলকে ডানদিক থেকে বাম দিকে পরিবর্তন করে।
  • এটি প্রতীকী অর্থে দেখায় যে, শিক্ষার্থীর অবস্থা ‘ছাত্র’ থেকে ‘গ্র্যাজুয়েট’ হিসেবে রূপান্তরিত হয়েছে।

বাংলাদেশে গ্র্যাজুয়েশন: ঐতিহ্য, অভিজ্ঞতা এবং শিক্ষাজীবনের স্মৃতি

বাংলাদেশে গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠান সব শিক্ষার্থীর জীবনের একটি বিশেষ দিন। শুধু বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজ শেষ করার উদযাপন নয়, এটি শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবনের গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক এবং সামাজিক স্বীকৃতি

১. প্রথাগত পোশাক: কালো গাউন এবং খালো টুপি

বাংলাদেশের বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজে গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা কালো গাউন এবং খালো টুপি পরে। এই পোশাকের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা:

  • অর্জিত জ্ঞান প্রদর্শন করে।
  • শৃঙ্খলা ও প্রফেশনাল আচরণ প্রকাশ করে।
  • সামাজিক মর্যাদা ও সম্মান অর্জন করে।

বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে, যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বা ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, এই প্রথা অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে পালন করা হয়।

২. শিক্ষার্থীদের অভিজ্ঞতা

গ্র্যাজুয়েশন দিনে শিক্ষার্থীরা শুধু গাউন পরে অনুষ্ঠানেই অংশ নেয় না, বরং এটি একটি স্মরণীয় অভিজ্ঞতা

  • ফটোগ্রাফি ও স্মৃতি সংরক্ষণ:
    শিক্ষার্থীরা প্রায়শই এই দিনে পেশাদার ফটোগ্রাফার দ্বারা ছবি তোলেন। কালো গাউন ও খালো টুপি তাদের অর্জিত শিক্ষার মর্যাদা এবং সাফল্যকে ফুটিয়ে তোলে।

  • পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে উদযাপন:
    এই দিনটি শিক্ষার্থীর জন্য একটি সামাজিক অনুষ্ঠানও। পরিবার, বন্ধু এবং সহপাঠীরা একত্রে শিক্ষার্থীর অর্জন উদযাপন করে।

  • আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি:
    গাউন এবং খালো টুপি পরিধান শিক্ষার্থীদের মনে একটি সফলতার অনুভূতি সৃষ্টি করে। এটি তাদের পরবর্তী জীবনের পথে আত্মবিশ্বাস ও দায়িত্ববোধের উৎসাহ জোগায়।

৩. সামাজিক ও প্রতীকী গুরুত্ব

গ্র্যাজুয়েশন পোশাকের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা কেবল নিজেকে নয়, সমাজে শিক্ষিত নাগরিক হিসেবে পরিচয় দেয়।

  • সমতার প্রতীক:
    সকল শিক্ষার্থী এক ধরনের পোশাক পরায় সামাজিক পার্থক্য লুপ্ত হয়, যা শিক্ষার সমানাধিকার ও সমতার বার্তা দেয়।

  • পেশাগত মর্যাদা:
    অনেক সময় এই গাউন এবং খালো টুপি শিক্ষার্থীর পেশাগত পরিচয়ের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। এটি একটি পেশাদারী ইমেজ তৈরি করে, যা চাকরি বা সমাজে গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি করে।

  • ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সংরক্ষণ:
    বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এই প্রথা বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চললেও, স্থানীয় সংস্কৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে অনুষ্ঠানটি সামাজিক এবং ঐতিহ্যগত দিক থেকে সমৃদ্ধ

৪. আধুনিক প্রভাব এবং উদ্ভাবন

আজকের দিনে, শিক্ষার্থীরা গ্র্যাজুয়েশনকে আরও সৃজনশীল ও আনন্দময় করে তোলার চেষ্টা করে।

  • খালো টুপি সাজানো:
    শিক্ষার্থীরা ক্যাপের উপর রঙিন ডিজাইন বা সৃজনশীল লেখা যোগ করে নিজেদের ব্যক্তিত্ব প্রকাশ করে।

  • সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম:
    ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম বা টিকটকে এই স্মৃতি শেয়ার করা হয়, যা যুগান্তকারী ডিজিটাল স্মৃতি হিসেবে ভিন্ন মাত্রা যোগ করে।

  • আনুষ্ঠানিক এবং প্রফেশনাল ইমেজ:
    অনেক শিক্ষার্থী এই পোশাককে ভবিষ্যতের চাকরি বা পেশাগত ইমেজ তৈরি করার জন্য ব্যবহার করে। এটি প্রমাণ করে যে, শিক্ষার্থীরা কেবল শিক্ষা অর্জন করেনি, বরং সামাজিক ও পেশাগত জীবনের জন্য প্রস্তুত

৫. শিক্ষাজীবনের স্মরণীয় মুহূর্ত

গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠান কেবল একটি পোশাক বা অনুষ্ঠান নয়, এটি শিক্ষাজীবনের একটি চিরস্মরণীয় মুহূর্ত

  • শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষক, বন্ধু ও সহপাঠীদের সঙ্গে শেষবারের মতো একসঙ্গে আনন্দ উদযাপন করে।
  • এটি শিক্ষার্থীর পরিশ্রম, অধ্যবসায় এবং লক্ষ্য অর্জনের স্বীকৃতি
  • গাউন ও খালো টুপি শিক্ষার্থীদের মনে গভীর প্রভাব ফেলে, যা তাদের জীবনের পরবর্তী অধ্যায়ে অনুপ্রেরণা জোগায়।

গ্র্যাজুয়েশন গাউন এবং খালো টুপি ইতিহাসে শুধু শিক্ষার প্রতীক নয়, বরং কিছু আজব ও রহস্যময় ঘটনা নিয়েও জড়িত। এখানে কিছু উল্লেখযোগ্য উদাহরণ তুলে দিচ্ছি:

১. মধ্যযুগের বিশ্ববিদ্যালয় ও গোপন কোড

মধ্যযুগের ইউরোপে, বিশেষ করে অক্সফোর্ড এবং কেমব্রিজের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা শুধু পড়াশোনা করত না, বরং গোপন চিহ্ন বা কোড ব্যবহার করত গাউনের সঙ্গে

  • গাউন বা হুডের দৈর্ঘ্য ও ফোল্ডের সংখ্যা শিক্ষার্থীর সামাজিক অবস্থা বা প্রাপ্ত জ্ঞানের স্তর নির্দেশ করত।
  • এমনকি কিছু ক্ষেত্রে, শীর্ষস্থানীয় শিক্ষার্থী বা পণ্ডিতদের গাউন বিশেষ চিহ্ন দিয়ে সেলিব্রেট করা হত, যা বাইরের কেউ সহজে বুঝতে পারত না। এটি প্রায় একটি গোপন সমাজের সংকেতের মতো কাজ করত।

২. খালো টুপি ও অলৌকিক বিশ্বাস

এক সময়ে ইউরোপীয় শিক্ষার্থীরা বিশ্বাস করত যে, মোর্টারবোর্ড বা খালো টুপি তাদের জ্ঞান বাড়ায়

  • তারা মনে করত যে, টুপি মাথার মস্তিষ্ককে “শক্তি ও প্রজ্ঞার ধারা” ধরে রাখে।
  • এমনকি কিছু অঞ্চলে ধনীদের সন্তানরা গোপনে টুপি চুরি করে পড়ত, যাতে তারা শিক্ষার ক্ষমতা অর্জন করতে পারে।

৩. কালো গাউনের সঙ্গে অদ্ভুত বিধিনিষেধ

মধ্যযুগে কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের কালো গাউন পরিধান করার সময় বিশেষ নিয়ম মানতে হত

  • উদাহরণস্বরূপ, রাতের বেলা বা চ্যাপেল ছাড়া বাইরে গাউন পরিধান করা নিষিদ্ধ ছিল।
  • কেউ যদি নিয়ম ভঙ্গ করত, তার জন্য উপহাস বা শাস্তির ব্যবস্থা থাকত। এটি একপ্রকার গোপন নিয়ন্ত্রণ ও সামাজিক শৃঙ্খলার ব্যবস্থা হিসাবে কাজ করত।

৪. রহস্যময় অনুষ্ঠান এবং প্রতীকী আচরণ

কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে, বিশেষ করে মধ্যযুগীয় সময়ে, শিক্ষার্থীরা গ্র্যাজুয়েশনের আগে গোপন অনুষ্ঠান বা রীতি পালন করত

  • যেমন, হুড বা গাউনের বিশেষ ফোল্ডে প্রাচীন সুর ও মন্ত্র লেখা থাকত, যা শিক্ষার্থীদের “জ্ঞানী এবং সাহসী” বানানোর জন্য ব্যবহার হতো।
  • এটি আজকের দিনে যেন ছায়াময় বা অলৌকিক রীতি মনে হয়।

৫. খালো টুপি উড়ানোর প্রথার রহস্য

আজকের দিনে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা গ্র্যাজুয়েশনের শেষে খালো টুপি উপরের দিকে উড়িয়ে দেয়।

  • এর মধ্যে কিছু ইতিহাসবিদ মনে করেন, এটি মধ্যযুগে শিক্ষার্থীদের একটি “মুক্তির রীতি” থেকে এসেছে।
  • শিক্ষার্থীরা মনে করত, টুপি উড়ানো মানে তারা ছাত্র জীবন থেকে মুক্তি এবং নতুন জীবনের দিকে যাত্রা শুরু করছে

সুতরাং, গ্র্যাজুয়েশন পোশাক শুধু শিক্ষার প্রতীক নয়, গোপন সংকেত, অলৌকিক বিশ্বাস এবং রহস্যময় রীতির অংশ হিসেবেও ইতিহাসে দেখা যায়। এই কারণেই কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখনও তাদের প্রথা অনুযায়ী পুরনো নিয়ম ও রীতি মেনে চলে, যা শিক্ষার্থীদের জন্য একটি রহস্যময় ও স্মরণীয় অভিজ্ঞতা তৈরি করে।

গ্র্যাজুয়েশন পোশাক—কালো গাউন এবং খালো টুপি—শুধু একটি ঐতিহ্য নয়, এটি শিক্ষার্থীর অর্জন, সামাজিক মর্যাদা, আত্মবিশ্বাস এবং স্মৃতির প্রতীক। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই প্রথা শিক্ষার মর্যাদা এবং সামাজিক স্বীকৃতির একটি স্থায়ী প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। শিক্ষার্থীরা এই পোশাক পরিধান করে কেবল তাদের ডিগ্রি অর্জনের আনন্দ উদযাপন করেন না, বরং নিজেদের শিক্ষাজীবনের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়কে চিহ্নিত করেন।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন