জিলাপি কোন ভাষার শব্দ, ইংরেজি কি, ১ম চলন শুরু হয় কোথা থেকে? |
❓জিলাপি আসলে কোথা থেকে এলো? আমরা কি জানি এর আসল ইতিহাস?
আপনি কি কখনো ভেবেছেন, প্রতিটি রোজার ইফতারে বা শীতের সকালে যে মিষ্টি খাবারটি আমরা খাই—সেই জিলাপি নামটি কোথা থেকে এসেছে? এটি কি বাংলা শব্দ, না অন্য কোনো ভাষা থেকে ধার করা?
আজকের ব্লগে আমরা খুঁজে দেখব, জিলাপি শব্দের উৎপত্তি, ইংরেজি নাম, প্রথম তৈরি কোথায় হয়েছিল, এবং এমন কিছু তথ্য যা ৯৯.৯৯% মানুষ জানে না!
🌸🌸🌸🌸🌸🌸🌸🌸🌸🌸
🌀জিলাপি শব্দের উৎস | Origin of Jilapi
জিলাপি শব্দটি বাংলা নয়। এটি এসেছে আরবি শব্দ “জলাবিয়া (Jalabiya)” বা ফার্সি শব্দ “জালাবিয়া (Zalabiya)” থেকে।
আরবি ভাষায় জালাবিয়া মানে এক ধরনের ভাজা মিষ্টি খাবার, যা তেল বা ঘিতে ডুবিয়ে ভাজা হয় এবং সিরায় ডুবিয়ে মিষ্টি করা হয়।
ফার্সি ভাষার মাধ্যমে শব্দটি ভারতীয় উপমহাদেশে আসে, এবং ধীরে ধীরে এর উচ্চারণ পরিবর্তিত হয়ে বাংলায় “জিলাপি” হয়ে যায়।
অনেক ভাষাবিদ মনে করেন, “জিলাপি” শব্দটি প্রথম ইরান ও সিরিয়ার মরুভূমি অঞ্চল থেকে ভারতবর্ষে এসেছে। মধ্যযুগে মুসলিম বণিকদের হাত ধরে এটি উপমহাদেশে ছড়িয়ে পড়ে।
🍊🍊🍊🍊🍊🍊🍊🍊🍊🍊
🍯ইংরেজিতে জিলাপি কী বলে? | Jilapi in English
ইংরেজিতে জিলাপিকে বলা হয় “Jalebi”।
তবে কিছু দেশে এটিকে “Sweet Pretzel” বা “Fried Syrup Coil” নামেও উল্লেখ করা হয়।
বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে প্রচলিত নাম হলো Jalebi, যা এখন অনেক ইংরেজি অভিধানেও স্থান পেয়েছে।
অক্সফোর্ড ডিকশনারি অনুযায়ী, “Jalebi” মানে হলো – a sweet snack made of a coil of batter fried and soaked in syrup.
মজার ব্যাপার হলো, পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশ—এই তিন দেশেই একই খাবার হলেও উচ্চারণ ও বানানে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। যেমন, পাকিস্তানে বলা হয় “Jalebi”, ভারতে “Jilebi”, আর বাংলাদেশে “Jilapi”।
🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼
🔥প্রথম কোথায় জিলাপি তৈরি হয় | First Origin of Jilapi
ঐতিহাসিক সূত্র অনুযায়ী, জিলাপির প্রথম উৎপত্তি হয় মধ্যপ্রাচ্যে (Middle East) প্রায় ১৩শ শতাব্দীতে।
“Zalabiya” নামে একটি খাবার সেই সময় আরব এবং পারস্য অঞ্চলে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল।
এই খাবারটি তৈরি হতো ময়দা, দই, এবং গরম তেলে ভেজে সিরায় ডুবিয়ে।
পরবর্তীতে এটি মুসলিম শাসকদের মাধ্যমে দিল্লি সালতানাত ও মোগল আমলে ভারতবর্ষে প্রবেশ করে।
বলা হয়, দিল্লির প্রথম মুসলিম রাজারা তাঁদের রান্নাঘরে এই খাবারটি পরিচিত করান এবং ধীরে ধীরে এটি সাধারণ মানুষের প্রিয় মিষ্টিতে পরিণত হয়।
💛💛💛💛💛💛💛💛💛💛
🥨বাংলাদেশে জিলাপির প্রচলন | Jilapi in Bangladesh
বাংলাদেশে জিলাপি জনপ্রিয় হয় ১৮শ শতাব্দীর শেষের দিকে।
তখনকার হাটবাজারে মেলা বা ঈদের সময় “জিলাপি” ছিল বিশেষ আকর্ষণ।
বাংলাদেশে এটি সাধারণত ময়দা, দই, এবং চিনি সিরা দিয়ে তৈরি হয়, তবে পুরনো দিনে এটি বানানো হতো খেজুর গুঁড়ের সিরা দিয়ে!
এই গুঁড়ের জিলাপি আজও কিছু গ্রামীণ এলাকায় তৈরি হয় এবং এর স্বাদ শহরের জিলাপির চেয়ে অনেক আলাদা ও ঘন।
এমনকি কিছু পুরনো মিষ্টান্ন প্রস্তুতকারক আজও বিশ্বাস করেন, প্রথম দিকের জিলাপি গোল নয়, বরং সর্পিল নয়নে বানানো হতো—যার আকৃতি অনেকটা “S” অক্ষরের মতো ছিল।
এই তথ্যটি খুব কম মানুষ জানে!
🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹
🍬জিলাপি শুধু খাবার নয়, সংস্কৃতির প্রতীক | Jilapi as Cultural Symbol
বাংলাদেশে জিলাপি শুধু একটি মিষ্টি নয়—এটি সংস্কৃতির এক আবেগপূর্ণ প্রতীক।
ইফতার মানেই জিলাপি, শীত মানেই জিলাপি, বিয়ের আগের দিন গ্রামের মেলায় জিলাপি ছাড়া আয়োজন অসম্পূর্ণ।
অনেক পুরোনো দোকান যেমন ঢাকার পুরান পল্টন বা চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে, আজও প্রাচীন রেসিপিতে জিলাপি তৈরি করে আসছে।
এমনকি “জিলাপি” শব্দটি আমাদের ভাষায় বাঁকা বা ঘুরানো জিনিস বোঝাতেও ব্যবহৃত হয়, যা প্রমাণ করে শব্দটির সংস্কৃতিক প্রভাব কতটা গভীর।
🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁
🧠৯৯.৯৯% মানুষ যা জানে না | Unknown Facts about Jilapi
১. প্রথম জিলাপি বানাতে দই ব্যবহার করা হতো, বেকিং সোডা নয়।
২. প্রাচীন পারস্যে জিলাপি শুধুমাত্র রাজকীয় ভোজসভায় পরিবেশন করা হতো।
৩. তুরস্কে আজও জিলাপি “Zalabiyeh” নামে বিক্রি হয়, তবে তারা এতে গোলাপজল ব্যবহার করে।
৪. ভারতের দক্ষিণাঞ্চলে জিলাপি বানাতে মুগডালের পেস্ট ব্যবহার করা হয়!
৫. বাংলাদেশের একমাত্র জিলাপি উৎসব অনুষ্ঠিত হয় রাজশাহীর চারঘাটে—যেখানে স্থানীয় মিষ্টি প্রস্তুতকারীরা নিজেদের রেসিপি প্রদর্শন করেন।
🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻
📖শেষকথা – জিলাপির ইতিহাসে লুকানো মিষ্টি রহস্য | jahidnote
জিলাপি কেবল একটি খাবার নয়, এটি আমাদের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অংশ।
আরব থেকে শুরু করে বাংলা পর্যন্ত এর ভ্রমণ যেন সময়ের এক মিষ্টি যাত্রা।
আমরা যখন এক টুকরো জিলাপি মুখে দিই, তখন অনুধাবন করি না—এটি এক প্রাচীন সভ্যতার স্বাদ বহন করছে।
🍫🍫🍫🍫🍫🍫🍫🍫🍫🍫
💬তোমার মতামত দাও | Share Your Thoughts
তুমি কি জানো এমন আর কোনো খাবার আছে যার উৎপত্তি আরব দেশ থেকে কিন্তু এখন আমাদের সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছে?
কমেন্টে জানাও, এবং এমন আরও মজার ইতিহাস জানতে ভিজিট কর jahidnote ব্লগে!
