গতির ক্ষতি: বাইকপ্রেমীদের জন্য এক সতর্কবার্তা 🚴‍♂️


🚦 গতির নেশা 🚦

শ্বশুর দিল বাইকখানা,
বাবা দিল তেল,
ভাবলাম আমি ছুটব আজকে
উড়বে গতির খেল।

রাস্তার বাঁকে বাঁকে আমি
ধরলাম জোরে রাশ,
মনে হলো আমার গতিতে
হার মানে আকাশ।

মানুষ থামে, ধুলো উড়ে,
কাঁপে চারপাশ,
ছাগল লাফায়, গরু ভয়ে
পালায় দিক উদাস।

ঠিক তখনই সামনে দেখি
বিশাল এক গরু,
চোখের পলকে ধাক্কা খেয়ে
বাইক গেলো ঝরু।

খাদের ভেতর লুটিয়ে পড়ে
হারালাম সব হুঁশ,
দু দিন পরে জ্ঞান ফিরে পাই
ব্যথায় কাঁপে বুকে ঢুঁশ।

চেয়ে দেখি ভাই, আমার পা
আছে শুধু এক,
বাইক ঠিকই আছে তবে
ভেঙেছে জীবনের রেখ।

এখন ঘরে বন্দি বসে
কাঁদি রাত-দিন,
ভাবি যদি বুঝতাম আগে
করতাম ধীরে গমন।

হায় গতির নেশা যদি
বুকে না ঢুকত ঢেউ,
তাহলে আমি আজও হেঁটে
চলতাম ধরণি বেয়ে।

গতির ক্ষতি: বাইকপ্রেমীদের জন্য এক সতর্কবার্তা 🚴‍♂️
বাইকপ্রেমীদের জন্য এক সতর্কবার্তা 🚴‍♂️

ভূমিকা

আজকের তরুণ সমাজে বাইক শুধু যাতায়াতের মাধ্যম নয়, বরং শখ, স্টাইল আর অ্যাডভেঞ্চারের প্রতীক। তবে সেই শখ যদি বেপরোয়া গতির নেশায় রূপ নেয়, তখন আনন্দ মুহূর্তেই পরিণত হতে পারে শোকে। একটি ছোট্ট ভুল, একটি অসতর্ক মুহূর্ত, আর হারাতে হয় সবচেয়ে মূল্যবান জিনিস—জীবন কিংবা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ।

নিচের কবিতায় চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে এমন এক বেপরোয়া তরুণের গল্প, যে বাইকের গতিকে জীবন ভেবে নিয়েছিল, কিন্তু শেষে পেল ভয়ঙ্কর পরিণতি।

কবিতার সারসংক্ষেপ

কবিতায় একজন যুবকের কাহিনি বর্ণিত হয়েছে।

  • শ্বশুর দিয়েছে বাইক, বাবা দিয়েছে তেল।
  • তাই সে বাইক চালাতে গিয়ে গতি তুলেছে জেট বিমানের মতো।
  • দুর্ঘটনার ভয় না করে সে আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে গ্রাম-গঞ্জের বাঁকা রাস্তা ধরে ছুটে চলে।
  • হঠাৎ করে সামনে আসে একটি বিশাল গরু! ধাক্কা খেয়ে বাইক পড়ে যায় খাদে।
  • দুদিন অজ্ঞান থাকার পর সে জানতে পারে—বাইকটা ঠিক আছে, কিন্তু তার একটি পা নেই।
  • এখন সে ঘরে বসে পা হারানোর বেদনায় কাঁদে, ভাবে—“যদি আগে বুঝতাম, তাহলে ধীরে চালাতাম।”

এভাবে কবিতার প্রতিটি স্তবক আমাদের মনে করিয়ে দেয়:
👉 বেপরোয়া গতি নয়, জীবনই আসল।

বাস্তবতার সাথে মিল

কবিতাটি শুধু সাহিত্য নয়, বরং বাস্তব জীবনের প্রতিচ্ছবি।

  • বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবীতে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার বড় একটি কারণ হলো অতিরিক্ত গতি
  • WHO এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া মানুষের মধ্যে ৩০% এর বেশি মোটরসাইকেল চালক
  • সবচেয়ে ভয়াবহ বিষয় হলো, দুর্ঘটনায় বাইকটা টিকে গেলেও চালকের জীবন বা শরীর টিকে থাকে না।

শিক্ষা যা পাওয়া যায়

এই কবিতাটি আমাদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দেয়:

  1. গতি নয়, নিরাপত্তা প্রধান
    – যতই দক্ষ হই না কেন, হঠাৎ বাঁক বা অপ্রত্যাশিত বাধা এলে অতিরিক্ত গতি সামলানো যায় না।

  2. অন্যের দেওয়া সম্পদ নয়, নিজের জীবন মূল্যবান
    – বাইক বাবা-শ্বশুর দিতে পারে, কিন্তু জীবন একবার গেলে আর ফিরে আসে না।

  3. অভ্যাস বদলানো দরকার
    – বাইক চালানো মানেই প্রতিযোগিতা নয়। এটি শুধু চলার জন্য, দৌড়ের জন্য নয়।

  4. পরিবারের দায়িত্ব
    – প্রতিটি বেপরোয়া চালকের পিছনে একটি পরিবার থাকে যারা তার জন্য অপেক্ষা করছে।

গতির ক্ষতি” কবিতাটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—
🚨 বাইক বা গাড়ি কখনো জীবনের চেয়ে বড় নয়।
🚨 অল্প আনন্দের নেশায় চিরদিনের বেদনা ডেকে আনা বোকামি।
🚨 ধীরে-সুস্থে চালালে গন্তব্যে পৌঁছানো যায় নিরাপদে, আর জীবন হয় সুন্দর।

তাই মনে রাখুন:
👉 বাইকের গতি কমান, জীবনের গতি বাড়ান।
👉 নিরাপদে থাকুন, পরিবারকে বাঁচান। 

লেখক নোট:
এই কবিতার প্রতিটি লাইন যেন একেকটি সতর্কবার্তা। যারা বাইকের স্টাইলে মজে যান, তাদের জন্য এটি আয়নার মতো—যেখানে দেখা যায়, অতিরিক্ত গতির পিছনে শুধু অন্ধকারই অপেক্ষা করছে।


শিক্ষা:

বাইক বা গাড়ি জীবনের আনন্দ দিলেও, বেপরোয়া গতি জীবন কেড়ে নেয়।

ধীরে চালান, সতর্ক থাকুন—জীবনই আসল সম্পদ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন