ইলেক্ট্রন, প্রোটন ভাই ভাই, নিউটনের আর রক্ষা নেই


ইলেক্ট্রন, প্রোটন ভাই ভাই, নিউটনের আর রক্ষা নেই

ইলেক্ট্রন, প্রোটন ভাই ভাই, নিউটনের আর রক্ষা নেই


আমাদের চারপাশের পৃথিবীটা আসলে অনেক রহস্যে ভরা। যে মোবাইল ফোনে তুমি এখন এটা পড়ছো, যে ফ্যানটা ঘুরছে মাথার উপরে, কিংবা যে পানিটা গ্লাসে রাখা—সবই গঠিত হয়েছে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণিকা দিয়ে। আর এই ক্ষুদ্র জগতের রাজা হলো ইলেক্ট্রন, প্রোটন আর নিউট্রন। মজার ব্যাপার হলো, বিজ্ঞানীরা প্রায়ই বলেন—“ইলেক্ট্রন, প্রোটন ভাই ভাই, নিউটনের আর রক্ষা নেই।”

এখন প্রশ্ন হলো, এ কথার মানে কী? নিউটন তো আমাদের অঙ্কের বইয়ে মহাকর্ষ সূত্র লিখে দিয়েছিলেন, আপেল পড়ে মাথায় পড়েছিল বলেই তিনি মহাকর্ষ আবিষ্কার করেছিলেন। তাহলে ইলেক্ট্রন-প্রোটনের সাথে নিউটনের কী ঝামেলা? আসো, গল্পের মতো করে ব্যাপারটা বুঝি।

নিউটনের জগত: বড়দের নিয়ম

স্যার আইজ্যাক নিউটন ছিলেন অসাধারণ বিজ্ঞানী। তিনি বলেছিলেন—

  • প্রতিটি বস্তুর উপর বল কাজ করে।
  • পৃথিবীর সব কিছু মহাকর্ষ বলের টানে পড়ে যায়।
  • তুমি যদি বল নিক্ষেপ করো, সেটা আবার মাটিতে পড়ে যাবে।

এগুলো আমরা প্রতিদিন দেখি—একটা বল ছুড়ো, সেটা আকাশে ভেসে থাকতে পারে না। নিউটনের এই নিয়মগুলো খুব সুন্দরভাবে কাজ করে বড় জগতে, মানে গাড়ি, গাছ, মানুষ বা গ্রহ-নক্ষত্রের জগতে।

কিন্তু সমস্যা হলো—নিউটনের নিয়ম যখন ক্ষুদ্র জগতে, মানে অ্যাটমের ভেতর গিয়ে খাটানো হয়, তখন গুলিয়ে যায় সব!

ইলেক্ট্রন-প্রোটনের গল্প

একটা অ্যাটম মানে হলো ক্ষুদ্র একটা মহাবিশ্ব। এর মধ্যে আছে—

  • প্রোটন: ধনাত্মক চার্জওয়ালা কণা।
  • নিউট্রন: চার্জবিহীন কণা।
  • ইলেক্ট্রন: ঋণাত্মক চার্জওয়ালা কণা।

প্রোটন আর নিউট্রন থাকে অ্যাটমের কেন্দ্রে (nucleus)। আর ইলেক্ট্রনগুলো ঘুরে বেড়ায় চারপাশে।

এখন যদি আমরা নিউটনের সূত্র দিয়ে ইলেক্ট্রনের ঘোরা হিসাব করি, তাহলে বলবে—“ইলেক্ট্রন সূর্যের চারপাশে পৃথিবীর মতো ঘুরে বেড়ায়।”

কিন্তু বাস্তবে ব্যাপারটা মোটেও এমন না। ইলেক্ট্রনরা ঘোরে না নির্দিষ্ট পথে, বরং তারা এক রকম কুয়াশার মতো সম্ভাব্য অবস্থানে থাকে। এটা প্রমাণ করে—নিউটনের নিয়ম এখানে কাজ করছে না!

নিউটনের সর্বনাশ কেন?

একটু মজা করে বললে, ইলেক্ট্রন-প্রোটন যেন দুই ভাই। তারা নিজেদের চার্জের কারণে একে অপরকে টানে। নিউটনের নিয়ম বলবে—এরা পরস্পরের সাথে কক্ষপথে ঘুরবে, আর ঘুরতে ঘুরতে শক্তি হারাবে। এক সময় ইলেক্ট্রন প্রোটনের গায়ে লেগে যাবে, আর অ্যাটম ভেঙে পড়বে।

কিন্তু বাস্তবে তো আমরা দেখি—অ্যাটম ভেঙে পড়ে না, ইলেক্ট্রন প্রোটনের গায়ে লেগেও যায় না। তাহলে?

এখানেই এসে হাজির হলো কোয়ান্টাম মেকানিক্স

কোয়ান্টাম মেকানিক্স: ক্ষুদ্র জগতের রাজা

কোয়ান্টাম মেকানিক্স বলে—

  • ইলেক্ট্রনকে তুমি এক জায়গায় আটকাতে পারবে না।
  • এরা একসাথে কণা আর তরঙ্গ—দুটোই।
  • তুমি যদি ইলেক্ট্রন কোথায় আছে মাপতে চাও, তখনই সে তার অবস্থা বদলে ফেলবে!

এটাই হলো বিখ্যাত “কোয়ান্টাম অনিশ্চয়তা”।

তাহলে “ইলেক্ট্রন, প্রোটন ভাই ভাই, নিউটনের আর রক্ষা নেই” মানে হলো—নিউটনের নিয়ম ক্ষুদ্র জগতে এসে ফ্লপ খেয়ে যায়, আর সেখানে রাজত্ব করে কোয়ান্টাম নিয়ম।

ছোটদের জন্য মজার উদাহরণ

ভাবো, তোমার কাছে একটা ক্রিকেট বল আছে। তুমি সেটা ছুড়লে সোজা মাটিতে পড়বে—এটাই নিউটনের নিয়ম।

এখন যদি সেই বলটা হঠাৎ হাওয়া হয়ে যায়, আবার পাঁচ সেকেন্ড পরে তোমার মাথার ওপর ভেসে ওঠে, কিংবা একসাথে দশটা জায়গায় থাকে—তাহলে কেমন লাগবে?

ইলেক্ট্রন ঠিক এরকমই আচরণ করে।

নিউটনের জগৎ বনাম কোয়ান্টাম জগৎ

বিষয় নিউটনের জগৎ কোয়ান্টাম জগৎ
নিয়ম নির্দিষ্ট সূত্রে চলে সম্ভাবনার খেলা
বস্তু সুনির্দিষ্ট অবস্থান কুয়াশার মতো একসাথে অনেক অবস্থান
উদাহরণ বল মাটিতে পড়ে যায় ইলেক্ট্রন একই সাথে ঘুরে বেড়ায় হাজার জায়গায়
ব্যবহার গাড়ি, বিমান, গ্রহ কম্পিউটার, লেজার, কোয়ান্টাম কম্পিউটার

প্রযুক্তিতে কোয়ান্টাম রহস্য

ইলেক্ট্রন-প্রোটনের এই অদ্ভুত আচরণকে কাজে লাগিয়ে তৈরি হয়েছে—

  • কম্পিউটার চিপ
  • লেজার লাইট
  • MRI স্ক্যানার
  • এমনকি ভবিষ্যতের কোয়ান্টাম কম্পিউটার

তাহলে দেখা যাচ্ছে, নিউটন আমাদের বড় জগতে এখনো রাজা হলেও, ইলেক্ট্রন-প্রোটনরা ক্ষুদ্র জগতে তাদের দাপট দেখাচ্ছে।

গল্পের ছলে বিজ্ঞান শেখা

যদি আমরা মজা করে বলি—

  • প্রোটন হলো ক্লাসের মনিটর।
  • ইলেক্ট্রন হলো চঞ্চল দুষ্টু ছাত্র।
  • নিউট্রন হলো শান্ত-শিষ্ট ভদ্র ছেলে।

এদেরকে সামলাতে গিয়ে নিউটনের নিয়ম একদম ক্লাসে টিকতে পারে না। তখন আসতে হয় নতুন শিক্ষক—“কোয়ান্টাম স্যার”!

“ইলেক্ট্রন, প্রোটন ভাই ভাই, নিউটনের আর রক্ষা নেই”—এই কথার ভেতরে আসলে বিজ্ঞানের এক দারুণ মজার দুনিয়া লুকিয়ে আছে। নিউটনের নিয়ম এখনো আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কার্যকর, কিন্তু ক্ষুদ্র জগত বোঝার জন্য আমাদের দরকার কোয়ান্টাম মেকানিক্স।

ছোটদের জন্য বললে—
👉 নিউটন আপেলের জগতে রাজা,
👉 আর ইলেক্ট্রন-প্রোটনরা কোয়ান্টামের রাজা!

তাই বিজ্ঞান শেখা মানে শুধু বই মুখস্থ করা নয়, বরং মজার মজার গল্পের ভেতর দিয়ে দারুণ রহস্যময় এক জগৎ ঘুরে আসা।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন