আমার আনন্দময় নৌকা ভ্রমণ: নদীর বুকে এক দিন স্বপ্নের মতো
ভ্রমণ মানেই নতুন কিছু দেখা, শেখা এবং অনুভব করা। আর যদি সেটা হয় নদীর বুক চিরে নৌকা ভ্রমণ, তাহলে তো আনন্দটা দ্বিগুণ। আজ আমি শেয়ার করব আমার জীবনের একটি অসাধারণ অভিজ্ঞতা — একটি স্মরণীয় নৌকা ভ্রমণ, যা আমাকে প্রকৃতির আরও কাছাকাছি নিয়ে গিয়েছিল।
ভ্রমণের সূচনা
আমার নাম জাহিদুল ইসলাম। আমি ভ্রমণ করতে খুব ভালোবাসি। ব্যস্ত শহুরে জীবনের কোলাহল থেকে মুক্তি পেতে মাঝে মাঝে প্রকৃতির কোলে হারিয়ে যাওয়াটাই আমার কাছে পরম শান্তির। একদিন হঠাৎ বন্ধুদের সাথে সিদ্ধান্ত নিলাম, নদী পথে একটা দিন কাটানো হবে। স্থান নির্ধারিত হলো — মেঘনার তীরবর্তী চাঁদপুর।
ভোরবেলা রওনা দিলাম। চাঁদপুর পৌঁছে একটি স্থানীয় মাঝির নৌকা ভাড়া করলাম। সূর্য তখন হালকা রোদ ছড়াচ্ছে, নদীর হালকা ঢেউয়ে প্রতিফলিত আলো দেখে মনটাই ভাল হয়ে গেল।
প্রকৃতির এক অপূর্ব রূপ
নৌকা নদীর বুকে ভেসে চলছে। চারপাশে শুধু জল আর আকাশের মিলন। মাঝেমধ্যে কিছু জেলে মাছ ধরছে, কোথাও একটা বক বসে আছে এক পায়ে দাঁড়িয়ে। বাতাসে ভেসে আসা জল ও কাদা মাটির গন্ধ এক ধরনের স্মৃতিকাতরতা তৈরি করলো।
নদীর বুকে চলতে চলতে মনে হলো আমি যেন কোনও রূপকথার জগতে প্রবেশ করেছি। ছোট ছোট চর, সবুজ কাশবন, ডাঙায় খেলা করছে গরু আর ছাগল। মাঝি ভাই আমাদের গল্প শুনাচ্ছেন নদীর ইতিহাস, কীভাবে এই নদী বহু জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে।
নৌকায় দুপুরের খাবার
আমরা নিজেরা রান্না করা কিছু খাবার নিয়ে গিয়েছিলাম – ভাত, ভাজি, ভর্তা আর ইলিশ মাছ। মাঝনদীতে নোঙর করে, নদীর বুকে বসে আমরা সবাই মিলে খাওয়া-দাওয়া করলাম। এর চেয়ে শান্তি আর কী হতে পারে! হালকা বাতাস, চারপাশে নির্জন প্রকৃতি, আর বন্ধুদের সাথে ভাগ করে নেয়া একবেলা খাবার – স্বর্গীয় অনুভূতি।
আনন্দ, গান আর আড্ডা
খাবার শেষে শুরু হলো গান আর আড্ডা। কেউ গাইল রবীন্দ্রসংগীত, কেউ লোকসংগীত। আমরা সবাই হাতে তাল দিয়ে সুরে সুরে মেতে উঠলাম। কেউ আবার নৌকার খোলায় তবলার মতো ঠুকঠাক শব্দ তুলে দিল দারুণ ছন্দ। সময় যেন থেমে গিয়েছিল। মোবাইলের স্ক্রিনের বাইরে জীবনের আসল আনন্দ যে এত কাছেই ছিল, তা যেন নতুন করে অনুভব করলাম।
সূর্যাস্তের রঙে রাঙা নদী
দিনের শেষে সূর্য যখন পশ্চিমে হেলে পড়ছিল, তখন নদীর রঙ বদলে গেল। আগুনে লাল রঙে নদীর জল চকচক করছিল। সেই দৃশ্য মনে গেঁথে থাকবে আজীবন। আমরা সবাই চুপচাপ সে দৃশ্য উপভোগ করছিলাম। এক ধরনের নিঃশব্দ ভালোলাগা যেন মনের মধ্যে ঢেউ তুলছিল।
ফিরে আসার সময়
দিন শেষে যখন নৌকা ফিরে আসছে তীরে, তখন মনটা হালকা হলেও, একটু ভারাক্রান্তও লাগছিল। যেন একটা স্বপ্ন থেকে ফিরে আসছি বাস্তবে। তবে এই স্মৃতি বুকে নিয়েই আবার শহরে ফেরা, আবার নতুন দিনের অপেক্ষা।
কেন এই নৌকা ভ্রমণ ছিল বিশেষ?
- প্রকৃতির সান্নিধ্যে সারাদিন কাটানো হয়েছিল।
- ডিজিটাল ডিটক্স – ফোন বন্ধ, মন খুলে প্রকৃতি উপভোগ।
- বন্ধুদের সাথে গুণগত সময় কাটানো গিয়েছে।
- বাংলার নদী ও জীবনের সাথে সংযোগ অনুভব করেছি।
যারা নৌকা ভ্রমণে যেতে চান, তাদের জন্য কিছু টিপস:
- স্থানীয় মাঝি ভাড়া করুন – তারা নদী চেনেন ভালোভাবে।
- জল ও খাবার সঙ্গে রাখুন – নদীর মাঝে দোকান থাকে না।
- জীবন রক্ষাকারী জ্যাকেট ব্যবহার করুন – নিরাপত্তা আগে।
- পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখুন – প্লাস্টিক ফেলা থেকে বিরত থাকুন।
- গানের যন্ত্র/স্পিকারে হালকা গান শুনুন – প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে খাপ খায় এমন কিছু।
জীবনে মাঝে মাঝে এমন কিছু অভিজ্ঞতা দরকার যা আমাদের ভেতর থেকে তরতাজা করে তোলে। এই নৌকা ভ্রমণ ছিল ঠিক তেমনই একটি মুহূর্ত – জীবনের কোলাহল থেকে দূরে প্রকৃতির কোলে ফিরে যাওয়া। আমি, জাহিদুল ইসলাম, এই অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে ভাগ করে নিতে পেরে আনন্দিত। আপনারাও একদিন নদীর বুক ছুঁয়ে ফিরে আসুন — জীবনের নতুন অর্থ খুঁজে পাবেন নিশ্চিত।